Header Ads

Header ADS

(জুঁই)

(জুঁই)

-- কি ভাইয়া,, আজ এতো মন খারাপ??(জুঁই)
কলেজের সামনে আফতাব চাচার দোকানে একা একা বসে গুড়ের চা খাচ্ছিলাম তখনি জুঁই এসে প্রশ্নটি করে বসল। জুঁই হলো আমার গার্লফ্রেন্ড জবার একমাত্র ছোট বোন। সে এবার ক্লাস সিক্সে পড়ে।
-- কি আর করব,, জুঁই?! তিনদিন থেকে তোমার বোনের সাথে কথা বলতে পারছি না। (আমি)
-- ভাইয়া,, আপনাকে বলতে ভুলে গেছি। জবা আপু তিনদিন থেকে খুব অসুস্থ। আর উনি গত বুধবারে মাথায় ঘুরে পড়ে গেছেন। যার জন্য হাতের মোবাইলটাও ভেঙ্গে গেছে।
জুঁইয়ের কথাগুলা শুনে তো আমার মাথা ঘুরতে শুরু করল।
আমি অস্থির হয়ে জুঁইকে জিজ্ঞেস করলাম,,
-- জুঁই, তো জবা এখন কেমন আছে!??!
-- আলহামদুলিল্লাহ.,ভাইয়া। আপুমনি ভালো আছেন।
জুঁই যতই বলুক জবা ভালো আছে তবুও যতক্ষন আমি ওকে নিজের চোখে না দেখছি তত সময় আমি শান্তি পাব না।
-- আচ্ছা। জুঁই,, জবা এখন কোথায় আছে??
-- ভাইয়া ,, আপুমনি এখন বাসায় আছেন।
-- তো রাতে ওর পাশে কে ঘুমায়??
-- আমি। কিন্তু কেনো ভাইয়া??
--ওহ। না কিছু না। চলো তোমায় চকলেট খাওয়াব।
-- হুম। চলেন ভাইয়া।
তারপর আমি জুঁইকে চকলেট কিনে দিয়ে আবারও আফতাব চাচার দোকানে ফিরে আসলাম।
আমি তো ভেবে পাচ্ছি না আমি জবাকে গিয়ে দেখব কিভাবে!! প্রথমত আমার সাথে ওর আব্বুর তেমন মিল নেই। দ্বিতীয়ত আজ ছুটির দিন। তাই উনাদের বাসায় সরাসরি যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।
অনেক চিন্তা ভাবনার পর জুনেদ চাচাকে ফোন দিলাম । যদিও উনি আমার চাচা তারপরও আমাদের মধে্য সব কিছু ফ্রী। উনি এবার অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়েন আর আমি ফার্স্ট ইয়ারে। উনি দেখতে আল্লাহর রহমতে কোনো রকম মানুষের মত। খুব লম্বা বলে উনার নেইক নামটাও হলো লাম্বু। উনি খুব রহস্যময় একজন মানুষ।
জুনেদ চাচাকে ফোন দিতেই রিসিভ করলেন,,
-- হ্যালো,, সাবলীল।
-- জি,, কেমন আছো??
-- এই তো আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো??
-- আলহামদুলিল্লাহ। তোমার সাথে আমার একটু কথা ছিল।
-- ঠিক আছে। জিন্দাবাজার চলে আয়।
--শু....
কথাটি বলার আগেই জুনেদ চাচা ফোনটা কেটে দিলেন।
কি আর করার!! মোটর সাইকেল নিয়ে সোজা জিন্দাবাজার চলে গেলাম। যাওয়ার পর উনাকে ফোন দিলাম।
-- এসে গেছত??
-- হুম। তুমি কোথায়??
-- এই তো বামদিকে দেখ।
বামদিকে তাকাতেই দেখি চাচাজি একটা রেস্টুরেন্টে বসে বসে চা খাচ্ছেন।
আমি গিয়ে উনার পাশে বসলাম।
-- তো কি দরকার বলতো??
-- আসলে আজকে রাত তোমাকে আমার সাথে এক জায়গায় যেতে হবে।
-- কোথায়??
-- জবাদের বাসায়।
-- আচ্ছা,, কখন??
-- রাত দশটায়।
-- কি??
-- হুম।
-- আচ্ছা,, তুই কি করতে চাচ্ছিস??
-- আজ তিনদিন থেকে জবাকে দেখি নি। তাই ভাবছি রাতকে চুরি করে ওর রুমে ডুকব। তারপর দেখে আসব।
-- এসব বুদ্ধি তর মাথায় আসল কিভাবে??
-- আর কোথা থেকে!! হিন্দি সিনেমায় দেখলাম।
-- দেখ সাবলীল,, এটা সিনেমা না । এটা বাস্তবতা। আমি যাব না।
-- আমার চোখের দিকে তাকিয়ে না করেন দেখি??
জুনেদ চাচা আমার দিকে কতক্ষন তাকানোর পর বললেন,,
-- ঠিক আছে। ঠিক সময়ে আমি ওদের বাসার সামনে যে চায়ের দোকান আছে সেখানে থাকব।
-- ধন্যবাদ আংকেলজি। আর শুনেন আপনার ১১১০ মোবাইলটাও সাথে আনিয়েন।
-- কেনো??
-- জবার মোবাইল নাকি নষ্ট হয়ে গেছে। তাই ওটা ওকে দিব।
-- ঠিক আছে। চল।
-- হুম।
তারপর আমি বাসায় চলে আসি।
দুপুর বেলা খাওয়ার পর জবার কথা ভাবতে ভাবতে একটা ঘুম দিলাম। সন্ধ্যা সাতটার সময় আমার ঘুম ভাঙ্গল।
ঘুম থেকে উঠেই বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম। তারপর আমার হারামী বন্ধু গুলার সাথে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত আড্ডা দিলাম।
ঠিক রাত নয়টা পয়তাল্লিশ মিনিটে আমি আর জুনেদ চাচা জবাদের বাড়ীর সামনে মিলিত হলাম। তারপর অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন জবার আব্বুর রুমের লাইটটা অফ হবে।
জবার আব্বুর রুমের লাইট অফ হতে হতে প্রায় দশটা দশ বেজে গেলো।
-- সাবলীল,, লাইট তো বন্ধ হয়ে গেলো। কিন্তু আমরা যাব কোনদিকে??
-- চাচাজি,, আপনাকে যেতে হবে না। আপনি শুধু এখান থেকে দাড়িয়ে দেখবেন জবার আব্বুর রুমের লাইট জ্বলে কিনা???! জ্বললেই আমাকে ফোন দিবেন??!
-- ঠিক আছে।
-- মোবাইলটা দিন??
-- ওহ। এই নে।
এখন আপনাদের একটা প্রশ্ন নিশ্চয়ই থাকতে পারে যে আমি বন্ধুদের রেখে জুনেদ চাচাকে নিয়ে এখানে আসলাম কেনো??!!
আসলে কিছু মানুষের কাছে ওদের বন্ধুদের চেয়ে আরও ঘনিষ্ঠ একজন মানুষ থাকে। যে বন্ধু না হলেও বন্ধুদের চেয়ে আরও বেশি কিছু। যেমন আমার ক্ষেত্রে জুনেদ চাচা।
.
.
তারপর আমি দেয়াল টপকিয়ে ভেতরে ডুকে গেলাম। ভেতরে ডুকতেই জবাদের পোষা কুত্তাটা আমার দিকে দৌড়ে আসল। আমিও বোকা না। আমি আসার সময় পাঁচ টাকার এক পেকেট বিস্কুট নিয়ে আসছিলাম।
কুত্তাটা আমার সামনে আসতেই বিস্কুটের পেকেট জবাদের ফুল বাগানের দিকে ছুড়ে মারলাম। বিস্কুট ছুড়ে মারার সাথে সাথেই কুত্তাটা ওইদিকে দৌড় দিলো। আমিও সুযোগ বুঝে তাড়াতাড়ি জবার রুমের পাশের সুপারি গাছ দিয়ে উঠে ওর বেলকুনিতে চলে গেলাম।
বেলকুনিতে গিয়ে জবার রুমের দরজায় টুকটুক শব্দ করলাম। শব্দ করতেই জুঁই দরজা খুলল।
-- ভাইয়া,, তুমি???
-- ওই চুপ চুপ।
-- জুঁই কার সাথে কথা বলিস রে??( জবা)
-- কেউ না,, আপ্পি।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,,
--ভাইয়া,, তুমি এখানে??
-- জবাকে দেখতে আসলাম। ভেতরে চলো।
তারপর আমি জুঁইকে নিয়ে জবার রুমে ডুকতেই জবার বিড়ালটা বলে উঠল,,
-- মিয়াও।
আমিও সুন্দর করে উত্তর দিলাম,,
-- টিংকু, আমি কমলাকান্ত না যে তোমার ভাষাটা বুঝব। দয়া করে মাফ করো।
আমার এ রকম কথা শুনে জবা মুচকি মুচকি হাসল। অসুস্থত থাকায় জবা হাসি দেওয়ার ফলে ওকে দেখতে কেমন জানি মায়াবতী লাগছে।
আমি আর সময় নষ্ট না করে সোজা জবার কাছে চলে গেলাম। ওর কাছে গিয়ে ওর হাতটা ধরে জিজ্ঞেস করলাম,,
-- জবা,,কেমন আছো??
-- এই তো তুমি এসো গেছো। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
-- ঔষধ খেয়েছ??
-- না। তুমি খাইয়ে দাও।
আমি আর কিছু না বলে ওর পাশের টেবিল থেকে ঔষধ এনে ওকে খাইয়ে দিলাম।
-- জবা,, এই মোবাইলটা রাখো। নতুন মোবাইল কিনার আগ পর্যন্ত এইটা দিয়ে তুমি আমার সাথে কথা বলবে।
-- লাভ ইউ।
-- পাগলি একটা।
-- শুধুই তোমার।
পরে আরও কতক্ষন হাসাহাসি করে গল্প করলাম। কথা বলার ফাঁকে হঠাৎ করে ওর কপালে একটা ভালোবাসার প্রতীক এঁকে দিলাম।
আমাদের এ সব দেখে জুঁই শুধু মুচকি মুচকি হাসছিল।
তারপর জবার কাছে বিদায় নিয়ে আবার জুনেদ চাচার কাছে চলে আসলাম। এসে দেখি জুনেদ চাচা বসে বসে চায়ের দোকানে চা খাচ্ছেন।
-- চাচাজি,, কি চা খাচ্ছেন??
-- ওহ। তুমি এসে গেছো। গুড়ের চা খাচ্ছি। তুমিও বসো।
-- হুম। দুনিয়ার সবকিছু মিস করা গেলেও গুড়ের চা মিস করা যায় না।
তারপর দুজনে একসাথে চা খেয়ে নিজ নিজ বাসায় চলে গেলাম।
আমি বাসায় আসতেই আম্মু জিজ্ঞেস করলেন,,
-- কি রে?? এতো রাত কোথায় ছিলি?!?
আম্মুর কথাটা শুনে বড় দেওয়াল ঘড়িটার দিকে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি রাত প্রায় বারোটা বিশ হয়ে হয়ে গেছে।
-- না, এই তো আম্মু জাওয়াদের( আমার বন্ধু) বাসায় ছিলাম। একটা ছবি দেখতে দেখতে দেরি হয়ে গেছে।
-- ছবির নাম কি রে???
-- মায়ের মমতা।
আমার উত্তরটা শুনে আম্মু আমার দিকে কতক্ষন তাকিয়ে বললেন,,
-- ওহ। যাহ উপরে নতুন ছবি শুরু হবে" বাবার ধোলাই"।
আমারও আর বুঝতে সমস্যা হলো না যে আম্মুও আমার সাথে মজা করতেছেন। আমি আর কিছু না বলে সোজা রুমে চলে আসলাম।
রুমে এসে শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম,,
"রাতে ভাত খাই নাই তাতে কি?!!আজ তিনদিন পর রাতে তো একটু ভালো ঘুম হবে। আর হয়ত জবারও।"

No comments

Powered by Blogger.